অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা - appendicitis ar ghoroa upay
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা - appendicitis ar ghoroa upay |
বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের সংযোগস্থলে বৃহদান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি ছোট থলির মতো অঙ্গ আছে। যাকে অ্যাপেন্ডিক্স বলা হয়, আমাদের দেহে এই অঙ্গের তেমন কোনো কাজ নেই। তবে বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই অঙ্গটি কারনে প্রাণঘাতী হয়ে থাকে।
আর অ্যাপেন্ডিক্সের এ সমস্যাটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামে পরিচিত। সময়মতো অস্ত্রোপচার করা না গেলে বা সমস্যা ধরা না পড়লে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে মৃত্যুও হতে পারে।সেই জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ‘সার্জিক্যাল এমার্জেন্সি’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন ও কীভাবে হয়ঃ
কোনো কারণে অ্যাপেন্ডিক্সে খাদ্য বা ময়লা ঢুকে গেলে সেখানে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয় এবং সেখানে নানা জীবাণুর আক্রমণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে অ্যাপেন্ডিক্সে ব্যথা হতে শুরু করে। চলুন এবার জেনে নেই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ গুলো ভালো ভাবে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা - appendicitis ar ghoroa upay |
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণঃ
১)সাধারণত অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়। পেটের মধ্য থেকে ব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে ডান পাশে থেমে স্থায়ী ভাবে ব্যথা হওয়া।
২)নড়াচড়া করলে অথবা গভীর ভাবে দম নিলে হাঁচি কাশি দিলে ব্যথা তীব্র ও অসহনীয় হয়ে উঠে।
৩)খাবারের রুচি কমে যায়, বমি বমি ভাব হয় ও বমি হওয়া অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ।
৪)অ্যাপেন্ডিক্সের কাছাকাছি লসিকা গ্রন্থি ফুলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
৫)হজমের সমস্যা হয় ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া হওয়া অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ।
৬)অন্যান্য উপসর্গ গুলোর সাথে জ্বর থাকতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় না।
৭)অ্যাপেন্ডিক্স কোনো কারণে ফেটে গেলে সারা পেটজুড়ে সাংঘাতিক ব্যথা অনুভূত হয় এবং পেট ফুলে ওঠে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা - appendicitis ar ghoroa upay |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ অথবা এন্টিবায়োটিক সেবন হলো অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চূড়ান্ত চিকিৎসা।
প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণের পর কিছু ঘরোয়া উপায়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা ও ফোলা কমানো যায়। এবার দেখে নিন অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো।
১। অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘরোয়া প্রতিকার হল মুগ ডাল। এক মুঠো মুগ ডাল এক বাটি পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে মিশ্রণটি থেকে এক টেবিল চামচ পরিমান পান করুন। কার্যকরী ফল পেতে দিনে তিন বার পান করুন।
২। অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ে রসুন অনেক কার্যকরী উপাদান। এটি অ্যাপেন্ডিক্সের ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
৩। অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগির জন্য সবজি খাওয়া খুবি ভালো। ১০০ মিলিলিটার শশা ও ১০০ মিলিলিটার বিটের রসের সাথে ৩০০ মিলিলিটার গাজরের রস মিশিয়ে দিনে দুই বার পান করলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ে অত্যন্ত উপকারি।
৪। অ্যাপেন্ডিক্স সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন এতে আপনার অ্যাপেন্ডিক্স ভালো থাকবে।
৫। আস্ত গম খাওয়া অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার উপায় এবং এটি হজমের জন্য ও উপকারি।
৬। পুদিনা পাতার কয়েক ফোঁটা রস পানিতে মিশিয়ে ৩-৪ ঘন্টা পর পর পান করলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা দূর করে
৭। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগীর জন্য লেবুর রস অনেক উপকারি।লেবুর রস ব্যথা কমাতে এবং বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে করে। একটি লেবুর রস বের করে নিয়ে এর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন। দিনে দুই তিনবার মিশ্রণটি পান করুন।
৮ । এপেন্ডিসাইটিসের রোগীদের জ্বর আসলে তুলসি পাতা সিদ্ধ করে পানি খাওয়া খুবি কার্যকারী। একমুঠো তুলসি পাতার সাথে এক টেবিল চামচ আদার পেস্ট এক কাপ পানিতে মিশিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে থাকুন যতক্ষণ না মিশ্রণটি অর্ধেক হয়ে যায়। এটি বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে। প্রতিদিন ৩-৪টি কাঁচা তুলসি পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন তাহলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে
৯ । দুই চামচ মেথি ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করে চায়ের মত পান করুন। এটি অ্যাপেন্ডিক্সের ভিতরে পুঁজ ও অত্যধিক মিউকাস উৎপাদনে বাঁধা প্রদান করে। তাই নিয়মিত এটি পান করুন।
১০। দীর্ঘস্থায়ী অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক লিটার ঘোল পান করলে উপকৃত হবেন কারণ এটি অ্যাপেন্ডিক্সের ভিতরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।
১১। ব্যথা কমানোর জন্য একটি ভেজা কাপড় পেটে জড়িয়ে এর উপর শুষ্ক পশমী কাপড় শক্ত করে বেধে রাখুন। এটা আপনার এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
অ্যাপেনন্ডিসাইটিস আপনার শরীরের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। উপরোক্ত ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে অ্যাপেনন্ডিসাইটিসের ব্যথা ও জ্বালা যন্ত্রণা দূর করা যায়।
যদি এগুলো কিছুদিন ব্যবহার করার পরও আপনার অ্যাপেনন্ডিসাইটিস ব্যথা না কমলে তাহলে আপনাকে অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করিয়ে ফেলতে হবে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা - appendicitis ar ghoroa upay
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা, appendicitis ar ghoroa upay, এপেন্ডিসাইটিস কেন হয, এপেন্ডিসাইটিস ছবি, এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ, এপেন্ডিসাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা,এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, এপেন্ডিসাইটিস প্রতিরোধ, এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়,
0 Comments